শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৮ পূর্বাহ্ন
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে দলটি। তবে এই অভিযোগ নাকচ করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের তিন থানার কর্মকর্তারা। তারা বলছেন- গণগ্রেপ্তার নয়, নির্দিষ্ট মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে মামলা না থাকলে গ্রেপ্তার করে না বলে দাবি করেন তারা।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানা, বিমানবন্দর থানা ও কোতয়ালি মডেল থানা সূত্র জানিয়েছে- এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা বিএনপি নেতাকর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন মামলা রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
জানা গেছে- মেট্রোপলিটন পুলিশের বিমানবন্দর থানায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুই মামলায় শুক্রবার দিবাগত রাতে ও শনিবার সকালে সাত কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে গত বুধবার রাতে চাঁদাবাজির মামলায় চারজন ও শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের হওয়ায় মামলায় তিনজন। এছাড়া কাউনিয়া থানায় দায়ের হওয়া ৩৯ জন বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যে মামলায় আসামি করা হয়েছে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহীনকেও। পাশাপাশি শনিবার পর্যন্ত কোতয়ালী মডেল থানায় ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিমানবন্দর থানার ওসি (তদন্ত) এ.আর মুকুল বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাতে নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের অফিস কক্ষে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা ওয়ার্ডের দিয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দেয়। রাতে স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ঘটনায় শনিবার সকালে নামধারী আটজনসহ অজ্ঞাত ২০ জনকে আসামি করে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মজিবুল হক বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে ডেফুলিয়া এলাকার মো. মনির হোসেন হাওলাদার, করমজা এলাকার কর্মী বাকের হাওলাদার ও দুলাল হোসেন খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়া গত বুধবার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল মান্নান নামের এক ব্যবসায়ীর দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলায় পুলিশ শুক্রবার রাতে ডেফুলিয়া এলাকা থেকে নাছির উদ্দিন, গণপাড়া এলাকা থেকে রাসেল হোসেন ও মাসুম এবং করমজা এলাকা থেকে নয়ন শরীফকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে কোনো বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রশ্নই ওঠে না। এই অভিযোগ যদি কেউ করে থাকে তাহলে তার অভিযোগ ভিত্তিহীন। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন- কাউকে বিনা কারণে কিংবা অহেতুক গ্রেপ্তার বা আটক করা হচ্ছে না। আটকৃদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রয়েছে।
বরিশাল কাউনিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন- যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তো নির্দিষ্ট মামলা রয়েছে। সেক্ষেত্রে অভিযোগের কোনো সুযোগ নেই। মামলা রয়েছে তাই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সত্যরঞ্জন খাসকেল জানান- কাউকে তো শুধু শুধু গ্রেপ্তার করতে পারে না পুলিশ। মামলা রয়েছে তাই গ্রেপ্তার রয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মী থাকতে পারে। তবে বিএনপি নেতাকর্মী দেখে আমরা কাউকে গ্রেপ্তার করিনি।
এদিকে গ্রেপ্তাররা সবাই বিএনপির কর্মী বলে দাবি করেছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন। তিনি জানান, গ্রেপ্তার হওয়া কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের কথা ছিল।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন- নির্বাচনকে একতরফা করতে সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করাচ্ছে পুলিশকে দিয়ে। বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাসা ঘেরাও করে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করছে পুলিশ প্রশাসন। এই অবস্থা নিরসন না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন কোনোদিনই সম্ভব নয়।’
Leave a Reply